আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের দলীয় ইশতেহার ঠিক করতে বিষয় ভিত্তিক আলাদা আলাদা সেল গঠন করার জন্য দলের উপদেষ...
গতকাল শনিবার বিকালে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয়, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর দ্বিতীয়বারের মতো এবং ২০তম জাতীয় সস্মেলনে দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি নিজের কার্যালয়ের সবকিছুর বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন প্রধানমন্ত্রী। কার্যালয় ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং স্টাফদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী দলের কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টাদের সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কার সঙ্গে আলোচনা করবো? যারা একুশে আগস্ট আমাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা করেছিলো তাদের সঙ্গে? যারা আমার দলের অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে? প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি নেত্রীর (খালেদা জিয়া) ছেলে মারা যাওয়ার পর আমি তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গেলাম। কিন্তু মুখের ওপর বাসার গেট বন্ধ করে দিয়ে আমাকে ঢুকতে দেওয়া হলো না। আমাকে অপমান করা হলো। যারা সামান্যতম সৌজন্যবোধ জানে না তাদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? আর কোন খুনির সঙ্গে তো আমরা সংলাপে বসতে পারি না। তারা তো আসলেই খুনি, তাদের হাতে তো মানুষের রক্ত। তারা কোন মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে?
সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সামনে আরও কঠিন সময় মোকাবেলা করতে হবে। তবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলতে হবে, সততা নিয়ে কাজ করতে হবে। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, একটা জিনিস মানুষকে জানাতে হবে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে লুটপাট হয়, হাওয়া ভবন খোলে। মানুষ খুন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, লুটপাট ছাড়া বিএনপি আর কিছুই দিতে পারে না। মানুষকে এটাও বলতে হবে, সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে দেশের উন্নতি হবে না।
দলের সবাইকে মানুষের জন্য রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের জন্য, জনগণের ভাগ্য গড়ার জন্য আমি রাজনীতি করি। সবাইকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলতে হবে, মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতে হবে। আমি চাই সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের সেবা করা।
রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে দলীয় কার্যালয়ে এসেছি। যানজটে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জনস্বার্থেই এখানে কম আসা হয়। তবে দলের কাজ করে যাচ্ছি। মনটা চাচ্ছিল এখানে আসি। তাই চলে এসেছি।’ পদ্মাসেতু প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিজ উদ্যোগে পদ্মাসেতু করছি। আমরা পারি এটি তার দৃষ্টান্ত। বিশ্বের অন্যান্য দেশ আমাদের এ উদ্যোগ দেখে অনেকেই নিজ থেকে তাদের দেশে সেতু নির্মাণে উদ্যোগী হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২১ সাল পর্যন্ত ইতিমধ্যে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। অনেকগুলো কিন্তু হয়ে গেছে। ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে কী কী করণীয় এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমি বিশ্বের যেখানেই যাই অন্য দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা বাংলাদেশের ‘দ্রুত উন্নয়ন’ কিভাবে হলো তা জানতে চান। দলের নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজের জন্য চিন্তা করি না। আমার দেশের মানুষ কেমন আছে, তাদের কি অবস্থা, তারা ভাল আছে কি না, তারা শিক্ষা পাচ্ছে কি না, চিকিত্সা পাচ্ছে কি না- এই চিন্তাই আমি সবসময় করি। এই চিন্তা আমরা করি বলেই তো আমরা কাজ করে সফলতা পাচ্ছি।
ওয়ান ইলেভেন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় সরকারি দলে যারা দু’দিন আগেও ছিল (বিএনপি-জামায়াত), ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, তাদেরকে বাদ দিয়ে আমাকেই আগে গ্রেফতার করা হলো। যাক সেই দুর্দিন কেটে গেছে। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। তবে আমাদের পুরনো দিনের কথাও মনে রাখতে হবে এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। তিনি বলেন, আমি আমার বাবাকে দেখেছি, বাবার কাছ থেকে শিখেছি। মাকে দেখেও শিখেছি। আমার মাকেও দেখেছি তিনি অনেক আত্মত্যাগ করেছেন। এই দলের জন্য তিনি নিজের গহনাটি পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। সব সময়ই আমার বাবার পাশে পাশে থেকেছেন। প্রতিটি কাজেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করেছেন। কাজেই আমিওতো সেই পরিবার থেকে এসেছি। আমাদের কাজই হচ্ছে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা।
গতকাল বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসে পৌঁছান শেখ হাসিনা। বৈঠককালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর বিকালে ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
No comments